যন্ত্রের তিন যুগ

যন্ত্রের তিন যুগ
(কথা সাহিত্যিক- জুলফিয়া ইসলাম)
বেশ কিছুদিন থেকেই ভাবছি, যন্ত্রযুগ নিয়ে কিছু লিখব। আপনারা হয়তো ভাবছেন, এ আবার কেমন লেখা। যন্ত্র ছাড়া তো আজকাল যোগাযোগের কথা ভাবাই যায় না, আর এ যোগাযোগের কথা মনে হলে প্রথমেই যেটা মনে আসে তা হচ্ছে টেলিভিশন। ইদানীং অবশ্য অনেক যোগাযোগের মাধ্যমই আছে। ফেইস বুক, টুইটার, লিংকডিন, জরপিয়া, বাডু, ভাইবার, হোয়াটস আপ, উই চ্যাট, ম্যাসেঞ্জার আরো কত কি? তবে যোগাযোগের জন্য টেলিফোনই সবচাইতে প্রাচীন এবং জনপ্রিয় পদ্ধতি। টেলিফোন নিয়ে যে ঘটনা বলব বলে ভাবছি সেটি আমি তিন ভাগে ভাগ করেছি, টেলিফোনের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। এগুলো কোনো গল্প নয়। কারণ বানানো ঘটনাকে তো আর সত্যি বলে চালানো যায় না, তেমনি সত্য ঘটনাও গল্প হতে পারে না।
আমার তিন ঘটনায় তিন প্রকারের যন্ত্র যুগ। হিসাবমতে তিন যুগ আগের ঘটনা নিয়েই শুরু করা উচিত। এরপরে বর্তমানের ঘটনা তারপরে ভবিষ্যতের কিন্তু মানুষ মূলত ভবিষ্যতের দিকেই ধাবমান হতে পছন্দ করে। আর তাইতো ভবিষ্যতের ঘটনাই আগে শোনা যাক।

তিন যুগ পরে : (২০০৪ সাল)
অপু তার বিজনেস প্রতিষ্ঠানে যাবার আগে শ্যামার কণ্ঠ শুনে তারপর অফিসে ঢোকে। শ্যামা, তুমি কি করো? কী আর করব, স্যাটেলাইট চ্যানেলে মুভির নায়ককে দেখছি। যা দারুণ দেখতে!
আমার জন্য কি তোমার মন খারাপ করছে?
না, তা কেন করবে?
অমন কাঠখোট্টা কণ্ঠে কথা বলছো কেন?
যদি মন খারাপ থাকে বলতে পারো, আজকে আমার একটি এল.সি খোলার কথা, নাইবা খুললাম, আজ শুধু তোমাকে সময় দেবো, সোনা।
সময় দিতে হবে না, আজকে তোমার সঙ্গে থাকতে আমার ভালো লাগবে না। আমি আজ শুধু মুভি দেখব।
শ্যামা, তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে, তুমি এখনো কচি খুকি।
ঠিক আছে আমি খুকি, এখন আর কথা বলতে ভালো লাগছেনা।
শ্যামা অপুকে কৃষ্ণ সম্বোধন করে, কিন্তু সেটি মাঝে মধ্যে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেটি ভিতরে লালন করে প্রেমের এটিই নিয়ম। প্রকাশভঙ্গি কম থাকাই ভালো।
আজ থেকে ছত্রিশ বছর আগে (২০১৫ সাল বর্তমান) অনেকেই বলত, প্রেম বিষয়টা আর ক’টা দিন পরে উঠেই যাবে। ছেলেমেয়েরা এটিকে এখন ওল্ড কনসেপ্ট ভাবে, এখন তো আছে নিউ সফ্টওয়্যার; আপডেট ভারশান।
ছত্রিশ বছর আগে অদিতি জমিয়ে গল্প করতেন এখনকার প্রেমে কোনো স্থায়িত্ব নেই। গড়তেও সময় লাগেনা, ভাঙতেও সময় লাগেনা। অদিতি চোখ-মুখ বাঁকা করে বলতে থাকে, প্রেম ভেঙে গেলে জীবনের অর্ধেকই ভেঙে যেত। পাড়ার কারো প্রেম হলে ছোট-বড় অনেকেই এর মধ্যে জড়িয়ে যেত। প্রেমে ব্যর্থ হলে দেবদাস বনে যেত। ঊনআশি-আশির দিকের ঘটনা, বেনু আপা তখন দশম শ্রেণীর ছাত্রী। তার প্রেমের বিরহে আমরা কোনো অংশে কম উত্তেজিত হইনি। নাওয়া-খাওয়া সব বাদ দিয়ে পাগলিনীর দশা প্রায় বেনু আপুর। আমরা বয়সে অনেক ছোট হলেও তার বেদনার ধাক্কা লাগত আমাদের বুকে। পাড়ার বড়রা বলতে লাগলেন, হারামজাদির কানে ধরে চড় লাগানো উচিত। আমাদের চোখে বেনু আপার প্রেমিক ছিল হিরো। বেনু আপার সৌভাগ্যকে অনেক মেয়েরা তখন হিংসে করত। মনে মনে নিজেকে নায়িকা ভাবত আর বেনু আপাকে খল নায়িকা।
কিছুদিন পরেই বেনু আপার বিয়ে হয়ে গেল। শ্বশুর বাড়ি যাবার সময় বেনু আপা ফুলে ঢাকা গাড়িতে চড়ে বসল। এটি এমন কোনো দুর্লভ দৃশ্য নয়, তবুও পাড়ার অন্য ছেলেরা যখন বেনু আপার প্রেমিককে খবরটা দিলো তখন ছেলেটি কাঁদতে কাঁদতে ছুটে এসে বলল, বেনু-তো আগে কখনো এমন করে কোনোদিন কাঁদেনি, তাহলে আমি এ বিয়ে ভেঙে দিতাম, ও বুড়ো হাবড়াকে (বেনুর বর) ঝাঁটা মেরে বের করতাম। সেই বেনু আপা ২০১৫ সালে এসে প্রেম নিয়ে হতাশ। তার মতে, প্রেমের যুগ এখন শেষ, এখন হলো ব্রেক আপের যুগ।
আসলে তিন যুগ আগে অর্থাৎ ২০১৫ সালে সবাই বলত, এখন প্রেমের যুগ শেষ। ছেলেমেয়েদের মনে এখন ভক্তি, শ্রদ্ধা, মূল্যবোধ, প্রেম, ভালোবাসা ইত্যাদি গোল্লায় গেছে। এখনকার ছেলেমেয়েরা টাকা ছাড়া আর কিছুই চেনে না। খাদ্যে যেমন ভেজাল, প্রেমেও তেমনি। গানগুলোতেও এখন আর প্রেমের কোনো আবেশ নেই। আছে শুধু ধুমধাড়াক্কা আর চেঁচামেচি।
তবে সুখের কথা হলো, ২০১৫ সালে যেটি ভাবা হয়েছিল সেটি ভুল প্রমাণিত হয়েছে। আজ তিন যুগ পরেও ছেলেমেয়েরা প্রেম করছে আগের মতোই। অপু আর শ্যামা এই ২০৪০ সালে এসেও চুটিয়ে প্রেম করছে। শুধু ধরণটা একটু পাল্টে গেছে এই আর কি।
শ্যামা এখন আর কথা বলতে চাইছে না অপুর সঙ্গে। যেমনি কথা তেমনি কাজ। ‘নো’ বলার সঙ্গে সঙ্গেই ফোনের লাইন কেটে গেল, তিন যুগ আগে আমাদের দেশের প্রযুক্তি এরকম ছিল না। এখন প্রযুক্তি ব্যবস্থার বিপ্লব ঘটেছে, স্যাটেলাইট দুনিয়া এখন হাতের মুঠোয়।
তিন যুগ আগে অর্থাৎ ২০১৫ সালে ল্যান্ডফোন, মোবাইল ছাড়া কোনো গতি ছিল না। স্যাটেলাইট হাতে নিয়ে ঘুরতে হতো। এখন আর সেটি হয় না, যন্ত্র হাতে নিয়ে ঘোরাটা আসলে একটা ঝক্কি বটে। এদিকে দামি যন্ত্র হলে আরেক ভয়, হাইজ্যাকার কখন আবার থাবা মারে। তিন যুগ পরে এখন ব্যবস্থা বদলে গেছে। তরঙ্গের খেলা। সার্ভিস প্রোভাইডাররা এখন খানিকটা তরঙ্গ ভাড়া দিয়ে থাকেন, সব মানুষের শরীরে তরঙ্গের বিকিরণ ঘটে। ভিন্ন ভিন্ন মানুষের ক্ষেত্রে ফ্রিকোয়েন্সি ভিন্ন ভিন্ন। মানুষের দেহের ফ্রিকোয়েন্সি টেলিফোন কোম্পানির ফ্রিকোয়েন্সির সঙ্গে মিলিয়ে নিতে হয়। কোনো নির্দিষ্ট কাউকে যখন খোঁজ করা হয় তখন সেই নির্দেশ সেই নির্দিষ্ট টাওয়ারে যায়। টাওয়ার তখন তার ফ্রিকোয়েন্সি ওই নির্দিষ্ট মানুষের ফ্রিকোয়েন্সির সঙ্গে মিলিয়ে দেয়। এক্ষেত্রে টেলিফোন সঙ্গে নিয়ে হ্যাঁটা কিংবা বোতাম টেপা এসব ঝক্কি ঝামেলা আর নেই। কারো নাম আর বিশেষত্বই নির্দিষ্ট একটি পাসওয়ার্ড তৈরি করে দেয়। আবার এই পাসওয়ার্ড পরিবর্তনের সিস্টেমেও আছে। এই মেকানিজম অনেকটা ‘রোবট’ পদ্ধতির মতোই তবে রোবট চালাতে গেলে কিছু পদ্ধতির দরকার পড়ে, এক্ষেত্রে সেই পদ্ধতির প্রয়োজন পড়ে না। মুখের কথাই যথেষ্ট।
শ্যামার এখন আর ইচ্ছে হচ্ছে না অপুর সঙ্গে কথা বলার। তিন যুগ আগে মিনু খালার বান্ধবী তার প্রেমিকের সঙ্গে ঝগড়া করে গা ঢাকা দিয়েছিল। মোবাইল ফোন বন্ধ করে বাড়িতে রেখে দুই বান্ধবীতে মিলে লেকের পাশে ঘুরে বেড়িয়েছিল, ফুচকা খেয়েছিল। অনেক আনন্দ ও ফ‚র্তি করেছিল। মুক্তির আনন্দে বিভোর ছিল। কিন্তু এখন যে গা ঢাকা দেবে তারও কোনো উপায় নেই। মাথার ওপরে তরঙ্গ বলয়। মানুষটির হারিয়ে যাবার কোনো উপায় নেই। টেলিফোন কোম্পানির কাছে কেউ যদি সাহায্য চায়, সম্পর্কের ভিত্তিতে খুব অল্প সময়ের ভিতরেই তাকে খুঁজে বের করা যাবে। শ্যামা মনে মনে ভাবল, প্রযুক্তির সুবিধা মানুষের স্বাধীনতাকে কিভাবে কেড়ে নিল?
বর্তমান (২০১৫ সাল) অপু ও শ্যামার প্রেম বেশ জমজমাট। ওরা সারাক্ষণই মোবাইলে কথা বলে। অপু অফিসে যাচ্ছে, রাস্তায় অসম্ভব যানজট, এতটাই যানজট যে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটেই অফিসে যাচ্ছে। বøু-টুথে শ্যামার সঙ্গে কথা হচ্ছে অপুর। যানজটের কারণে অপুর মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে রয়েছে। শ্যামা বলল, কী ব্যাপার অপু, আমি এত কথা বলে যাচ্ছি, তুমি কোনো উত্তর দিচ্ছ না কেন?
শ্যামা, তুমি না খুব ছেলে মানুষ। কিছুই বুঝতে চাও না। ঢাকা শহরের অবস্থা তো তুমি জানো। শ্যামা আরও বিরক্ত হয়ে বলল, তুমি কি মনে করেছ ঢাকা শহরে তুমিই একা বসবাস করো? তুমি কি জানো আমি এখন কোথায়?
কেন? কী করব?
আমার কোনো কিছুতেই তো তোমার আগ্রহ নেই। আমি এসব কিছু ভেবে তোমার সঙ্গে কথা বলছি না।
আমার কোনো কথাই তুমি কখনো ভেবে উত্তর দাও না। শ্যামা হঠাৎ দূর থেকে দেখতে পেলো পাড়ার পরিচিত একটি মুখ, লিলিকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো শ্যামা। প্রেমিকের সঙ্গে ঝগড়ার মুহূর্তে আশপাশের কাউকে সহ্য হয় না। অপুর উদাসীন ভাব শ্যামার মোটেও সহ্য হয় না। বান্ধবীর প্রেমিকরা তাদের মান ভাঙানোর কতো চেষ্টা করে। ভাইবারে কত রোমান্টিক ছবি, কত সুন্দর উক্তি, ওর বেলায় এসব কিছুই নাই। কিছু হলেই অপু ফোন কেটে দেয়। পরে সরিও বলবে না। ঢাকা শহরে কি ও একাই বসবাস করে? শ্যামা দাঁত কিড়মিড় করে বলল, আমাকে তোমার পছন্দ নয় আগে বললেই হতো।
অপুর মেজাজ আজকে এমনিতেই ভালো নেই। ঢাকা শহরে বড় বড় শপিংমল, গাড়ি, আকাশছোঁয়া বাড়ি কি নেই? নেই শুধু নিয়ম-শৃঙ্খলা। একটু এদিক ওদিক হলেই দুর্ঘটনা, তার ওপরে মোবাইল ফোন, সবার কানে মোবাইল। ফুটপাত থেকে নেমে এসে হ্যাঁক দিলেও কথা কানে নেয় না। সারাক্ষণ কানে যন্ত্র লাগানো, কাকে কী বলবে? কার ওপর রাগ ঝাড়বে? ওর অবস্থাতো তা-ই, অফিস থেকেও দিন রাত কল, কোনো শান্তি নেই। শ্যামা বলল, কী ব্যাপার চুপ কেন?
চুপ থাকব না তো কী করব? মনোযোগ কোন দিকে দেব?
কখন আসবে লেকের পাড়ে?
বিকেল চারটে বাজবে।
তখন আমার ক্লাস শেষ, আমি কি রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকব?
কোথাও গিয়ে বসবে।
অপু ফোনে কথা বলছে, বেশ জোরে জোরে।
গাড়ি থেকে এক মহিলা গলা সামনে বাড়িয়ে বলল, এইযে ছোকরা, এভাবে হ্যাবলার মতো রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলছ কেন? এক্ষুণি তো গাড়ির নিচে পড়তে!
এদিকে শ্যামা বলছে, আমি কিন্তু তোমাকে দশ মিনিট পর পর কল দিয়ে যাব।
আমি কি তোমার জন্য কাজকর্ম সব ছেড়ে লেকের পাড়ে গিয়ে বসে থাকব?
প্রয়োজনে তা-ই থাকবে।
অপুর ইচ্ছে হচ্ছে মোবাইল ফোনটা দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিতে। সন্ধ্যায় ওরা দুজনেই লেকের পাড়ে দেখা করল। দুজনেই প্রতিজ্ঞা করল, সারাদিন মোবাইলে একে অপরকে আর বিরক্ত করবে না। নির্দিষ্ট সময়ে একে অপরের সঙ্গে কথা বলবে। বাকি সময়টুকু কাজে ব্যস্ত থাকবে।

তিন যুগ আগে : (১৯৮৩ সাল)
অপু ও শ্যামা দুজনেই স্কুলে পড়ে। একই পাড়ার দুই কিশোর-কিশোরী। ওরা দুজনে একসঙ্গে ছবি আঁকে, নাটক করে। শ্যামা অপুর বোনের বান্ধবী, সেই সুবাদে ওদের বাসায় যাওয়া আসা। মাঝে মধ্যেই দুজনের মধ্যে ঝগড়া বেঁধে যায়। শেষ হয় শ্যামার কান্না দিয়ে।
এ পাড়ায় মাত্র সাতটি বাসায় টেলিফোন আছে। অপুদের বাসায় একটি ঢাউস সাইজের কালো টেলিফোন আছে। ফোনগুলোর রিসিভারও অনেক বড়, আঙুল দিয়ে ডায়াল করতে হয়। ডায়াল ঘুরে আবার আগের জায়গায় চলে আসে। অপুদের বাড়িতে ফোন আছেÑ এটি নিয়ে অপুর গর্বের শেষ নেই। স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করার সময় গল্পের অধিকাংশই টেলিফোন বিষয়ক। মাঝে মধ্যে অপু স্কুল ফাঁকি দিত। পরদিন যখন শ্যামা জিজ্ঞেস করত, কীরে তুই স্কুলে এলি না কেন? অপু গর্বে বুক ফুলিয়ে বলত, বড় মামা কালকে ফোন করেছিল, এক্সচেঞ্জ থেকে নম্বর দিয়েছিল দুপুর বারোটায়। এজন্য স্কুলে আসতে পারিনি।
বড় মামার ফোনের জন্য তুই স্কুল কামাই দিলি?
আরে তোর বাসায় তো টেলিফোন নেই। তুই টেলিফোনের কী বুঝবি? বড় মামার সঙ্গে যেদিন মা কথা বলেন সেদিন ট্রাঙ্কল করতে হয়। অনেক সময় রাত জেগে অপেক্ষা করতে হয়। অনেক সময় ডায়াল ঘোরাতে নম্বর পাওয়া যায় না। কখনো আবার দেখা যায়, রং নম্বরে ফোন চলে গেছে।
২০১৫ সালে যেমন ঘরে মোবাইল ফোন। ঘরের সদস্য সংখ্যা পাঁচ জন হলে ফোনের সংখ্যাও পাঁচটি বা তারও অধিক হয়ে থাকে। কানেকশনের জন্য সবসময় নেট কানেকশন থাকে।
১৯৮৩ সালে সেটি ছিল না। যা-ই হোক, অপুদের ফোনের খুব যতœআত্তি। অপুর মা রঙিন কাপড়ে ফুল তুলে ফোন ঢেকে রাখেন। ফোন রাখার জন্য আলাদা তাক আছে। আশপাশের লোকজন তাদের আত্মীয়স্বজনের খোঁজখবর নেবার জন্য অপুদের বাসায় এসে ফোন করে। ২০১৪ সালের টেলিফোন হচ্ছে ব্যক্তিসম্পত্তি। কথা হয় গোপনে এককভাবে। আর ১৯৮৩ সালে টেলিফোন ছিল বাড়ির সম্পত্তি। একটি ফোন নিয়ে সবার কাড়াকাড়ি। জোরে রিং বেজে উঠত। আর একবার নষ্ট হলে ছয় মাসে ঠিক হবার কোন লক্ষণ ছিল না। অর্থাৎ সে যুগে ছিল টেলিফোনের জমিদারি যুগ। অপু ও শ্যামার মধ্যে কথা হচ্ছে।
অপু, মজার কথা আছে!
কী রে, কী মজার খবর?
আমাদের বাসায় ফোন এসেছে। অপুর মন খারাপ হয়ে গেল। শ্যামার সঙ্গে এখন আর গর্ব করা যাবে না। তবুও গম্ভীর স্বরে বলল, এ আর এমন কী খবর?
এমন কী খবর মানে? এখন থেকে আমরা দুজন টেলিফোনে চুটিয়ে প্রেম করতে পারব।
পুনশ্চ : যন্ত্রের তিন যুগের গল্প আপনাদের মনে হতে পারে, এটি শুধু যন্ত্রের গল্প নয় প্রেমেরও গল্প বটে। তিন যুগের তিন রকমের প্রেম। সমাজের ভিন্নতা, বেঁচে থাকার ভিন্নতা। এটি হতে পারে কোনো গল্প অথবা তিন যুগের সত্যি ঘটনা।

দৈনিক ইত্তেফাক, ২০১৫

Share:

Leave a Comment

Your email address will not be published.

0

TOP

X